বালুরঘাটের পরোপকারী দুলাল বর্মণকে কুর্নিশ

সংবাদ সারাদিন, বালুরঘাট : বালুরঘাট কলেজের পদার্থবিদ‍্যার অধ‍্যাপক দুলাল বর্মণ। তার সাথে সাথে আংশিক ভাবে ‘ইন্ডিয়ান অ‍্যাসোশিয়েশন ফর দি কাল্টিভিশন অফ সায়েন্স’এ গবেষণা করে চলেছেন চাকরির পাশাপাশি। কিন্তু বালুরঘাট বা নিকটবর্তী গ্রামে তার পরিচয় শুধুমাত্র শিক্ষক হিসেবে নয়। বিশেষ করে সমাজসেবী ও রক্তদান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত।

২০১৭ সালের বন্যায় যখন নিজের বাড়ি বন্যাতে ভেঙে গিয়েছে তা সত্ত্বেও গরিব মানুষের পাশে ছুটে গেছেন ত্রাণ নিয়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের মানুষদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন রকম বিনামুল্যে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করা এবং থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক নির্ণয় শিবির আয়োজন করেন গ্রামে গ্রামে।

২০১৮ সালে দক্ষিণ দিনাজপুর ভলান্টিয়ার ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তিনদিনের সার্টিফিকেট কোর্সে উনি অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় রক্তদান সম্পর্কে মানুষদের গ্রামের মানুষদের সচেতন করা এবং রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে দুলালবাবুর অবদান অনস্বীকার্য।

গতবছর গ্রীষ্মকালে যখন জেলাজুড়ে রক্তসঙ্কট চলছে সে সময় রক্তদান শিবির আয়োজন করার ক্ষেত্রে এবং পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর হেলথ রিক্রিয়েশন ক্লাবের পক্ষ থেকে দুলালবাবুকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সুকুমার দে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন।

শুধু তাই নয়, শীতের সময় মালঞ্চা ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে যে সমস্ত দুস্থ মানুষজন যাদের শীতের পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য শীতের পোশাকের ব্যবস্থা করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গরিব মানুষকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতের কম্বল দান করেন।

বালুরঘাট কলেজের জাতীয় সেবা প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার এবং জেলা নোডাল অফিসার হওয়ার সুবাদে করোনাকালে যখন সকলেই ঘরবন্দি সেসময় কোভিদ সম্পর্কে গ্রামের মানুষদের মধ্যে ভীতি কাটানোর জন্য এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করবার জন্য, সরকারি নিয়ম নীতি জানানোর জন্য গ্রামে গ্রামে মানুষদের সচেতন করা, মাস্ক বিলি করা সহ কাজ হারানো মানুষদের চাল ডাল আলু সোয়াবিন দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং ব‍্যক্তিগত উদ‍্যোগে গ্রামে গ্রামে আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া মানুষদের ত্রাণ বিলি ও বাচ্চাদের দুধ, বিস্কুট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার বিলি করেন যাতে বাচ্চাদের পুষ্টির অভাব না ঘটে।

শুধুমাত্র খাওয়া পড়ার অভাব নয়, সরকারি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক করোনা সঙ্কটে রক্ত শুন‍্য না থাকে সে জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে গেছেন। নিজের উদ্যোগে ও বন্ধুদের সহযোগিতায় মোট আটটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন এবং প্রায় ৩০০ প্যাকেট রক্তের প‍্যাকেট ব্লাড ব্যাংকে সরবরাহ করেন।

নিজে করোনাক্রান্ত হবার পরও দমে যাননি তিনি। আবার বেড়িয়ে পরেছেন রাস্তায়, গ্রামগঞ্জে। পুজোয় রক্তদান শিবির আয়োজন করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের নতুন জামা কাপড় তুলে দিচ্ছেন যাতে তারাও সমান ভাবে পুজো উপভোগ করতে পারে।

সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুর ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ‍্যাসোশিয়েশনের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন দুলালবাবু।

এহেন সমাজসেবী ও পরোপকারী মানুষকে আমরা কুর্নিশ জানাই।

Spread the love