হরিশচন্দ্রপুরে ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল সদস্যা সহ চারজনের বিরুদ্ধে, টাকা লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল

সংবাদ সারাদিন, মালদা: ফের কাটমানির তীরে বিদ্ধ তৃণমূল। কাটমানি ইস্যু যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তৃণমূলকে। এবার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল সদস্যা, তার স্বামী, দেওর এবং সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যা ও তার স্বামী তথা তৃণমূল নেতা। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কটাক্ষ করেছে বিজেপি।

ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত‌ গাড়ড়া গ্রামে। অভিযোগ ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা রুমাসাহা তার স্বামী তথা তৃণমূল নেতা উত্তম সাহা, দেওর রতন সাহা এবং সুপারভাইজার গোপাল মণ্ডল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে জিও টকিং এর সময় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কাটমানি নিয়েছে। তারপরেও লিস্টে অনেকের নাম আসেনি। টাকা ফেরত চাইলে হুমকি দিচ্ছে। এদিকে আবার জব কার্ডের জন্য হাজার টাকা করে চাওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলেন লিস্ট থেকে নাম কেটে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এই মর্মে পঞ্চায়েত এবং বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে গ্রামবাসীদের একাংশ।এমনকি পঞ্চায়েত সদস্যা রুমা সাহার দেওর রতন সাহা ও সুপারভাইজার গোপাল মণ্ডলের একটি ভিডিওতে টাকা লেনদেন করতে দেখা গিয়েছে। যে ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পঞ্চায়েত সদস্যা এবং তার স্বামী। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি।

মোহাম্মদ আজাদ নামে অভিযোগকারী বলেন,” পঞ্চায়েত সদস্যা, তার স্বামী, দেওর এবং সুপারভাইজার, ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে জিও টকিং এর সময় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কাটমানি নেই। এখন ঘরের লিস্ট অনেকের নাম এসেছে অনেকের আসেনি। আমার নাম আসেনি। আমি টাকা ফেরত চাইলে হুমকি দিচ্ছে যা করার করে নে। পঞ্চায়েত এবং ব্লকে তাই অভিযোগ জানালাম।”

দিলশাদ রাজা নামে এক অভিযোগকারী বলেন,”প্রথমে ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়। তারপর এখন লিস্টে যাদের নাম এসেছে তাদের কাছে জব কার্ডের জন্য হাজার টাকা চাচ্ছে। না দিলে লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।আর লিস্টে যাদের নাম আসেনি তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। উত্তম সাহার টাকা নেওয়ার ভিডিও আছে আমাদের কাছে। আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। সুবিচার চাই।”

এদিকে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যা রুমা সাহা বলেন,”এই ধরনের অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। কেউ বললে এসে প্রমাণ দেখাক।আমার হয়ে আমার স্বামী কাজ দেখে। আমি যতটা সময় পাই এলাকায় যায়।”

অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তৃণমূল নেতা উত্তম সাহা বলেন,”এসব বিরোধীদের ষড়যন্ত্র। আমরা কোথাও থেকে টাকা নেয়নি।এসব বদনাম করার প্রচেষ্টা। যারা বলছে তাদের প্রমাণ করতে হবে। ভিডিওর সত্যতাও তিনি স্বীকার করেননি।”

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাস বলেন, “সংবাদমাধ্যমের থেকে খবরটি জানতে পারলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অঞ্চল নেতৃত্বকে জানানো হবে তদন্তের জন্য। যারা অন্যায় করে দল তাদের পাশে থাকবে না। যা ঘটেছে সেটা জেনে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া কটাক্ষ করে বলেন,” ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেই টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল দলটাই কাটমানির দল। দুর্নীতিতে ভরতি। আমরা এটা আগেই বলেছিলাম। জনগণ বুঝছে এখন।”

হরিশ্চন্দ্রপুরে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। বারবার কাটমানি কাণ্ডে শাসক দলের নেতা জন-প্রতিনিধিদের নাম জড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে তৃণমূলের উচিত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া। সাথে প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত। মানুষকে সচেতন হওয়া উচিত যাতে কেউ কোনো সরকারি প্রকল্পের জন্য কাউকে টাকা না দেয়

Spread the love