মাটির তলা থেকে নিখোঁজ যুবকের দেহাবশেষ উদ্ধার, সাঁকরাইলে বাইক চুরি চক্রের পান্ডা মৃত যুবক সঙ্গীদের হাতেই খুন, তদন্তে পুলিশ

সংবাদ সারাদিন, হাওড়া: নিখোঁজ হওয়া যুবককে অপহরণ করার অভিযোগের তদন্তে নেমে তার দেহাবশেষ উদ্ধার করলে পুলিশ। সাঁকরাইলের মানিকপুর সারেঙ্গার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় মাটির তলা থেকে শুক্রবার বিকেলে শেখ হাসান (১৮) নামে ওই যুবকের দেহাবশেষ উদ্ধার করে ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠিয়েছে সাঁকরাইল থানা। শুধু তাই নয়, যুবককে অপহরণের কিনারা করতে গিয়ে একই সঙ্গে পুলিশ একটি বাইক চুরি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে। এমনকী তদন্তকারীরা এও জানতে পেরেছেন, ওই বাইক চুরি চক্রেরই অন্যতম পান্ডা ছিলেন সাঁকরাইলের মানিকপুরের কামদেবপুরের বাসিন্দা মৃত শেখ হাসান। চোরাই বাইক বেচাকেনা নিয়ে ঝামেলা হওয়াতেই সঙ্গীদের হাতে খুন হতে হয় তাকে। গত বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থেকে শেখ মুন্না ও শেখ ইনামুল নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেই এই ঘটনা জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে শেখ হাসান নামে মৃত যুবক নিখোঁজ হয়ে যান। তার পর ওই যুবকের পরিবারের তরফে প্রথমে সাঁকরাইল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল। ফের যুবককে অপহরণ করা হয়েছে বলে থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই ঘটনার তদন্তে নেমে গত বুধবারই অপহরণকারী সন্দেহে মৃত যুবকের দুই সাগরেদ শেখ মুন্না ও শেখ ইনামুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিশ জানতে পারে তারা একটি বাইক চুরির চক্র চালায়। হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের মতো বিভিন্ন জেলায় এই চুরির চক্রটি সক্রিয়। ধৃত দুই যুবক স্বীকার করে তাদের চারজনের একটি দল পাশাপাশি জেলাগুলি থেকে মোটরবাইক চুরি করে এনে বিক্রি করত। শেখ হাসান ওই দলের অন্যতম পান্ডা ছিল। বাইক চুরি করা ও বিক্রি করা সংক্রান্ত বিষয়ে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে শেখ হাসানের সঙ্গে তাদের বিবাদ বাধে। আর সেই বিবাদ থেকেই তাকে খুন করা হয়।

পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ভেঙে পড়ে দুই যুবক স্বীকার করে নেয়, মোটরবাইক চুরির ভাগবাটোয়ার নিয়ে গোলমালের জন্য তারা তিনজন মিলে শেখ হাসানকে মেরে ইঁটভাটায় মাটিতে পুঁতে দিয়ে আসে। গত ৩১ জানুয়ারি ইটভাটায় গলা টিপে তারা শেখ হাসানকে খুন করে। শুক্রবার ধৃতদের নিয়ে ওই ইঁটভাটায় তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। ধৃতদের বয়ান মতো এরপর মাটিরতলা থেকে উদ্ধার হয় নিখোঁজ যুবকের দেহাবশেষ। আগেই মানিকপুরের রাস্তার পাশ থেকে তার পতিত্যক্ত মোটরবাইকটি উদ্ধার হয়েছিলে। তারপর সেই বাইকের সূত্র ধরেই তদন্তে নেমেছিলে পুলিশ। অবশেষে দেহাবশেষ উদ্ধার করল তদন্তকারীরা।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘মূলত একটি অপহরণের মামলার তদন্ত করতে গিয়েই প্রথমে একটি মোটরবাইক চুরির সন্ধান মেলে। এরপর জানা যায়, ওই চক্রের হাতেই খুন হয়েছে এদের অন্যতম পান্ডা হাসান। ওই চক্রের আরও এক জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

এদিকে এদিন মৃতের বাবা আনোয়ার আলি শেখ জানান, তার ছেলেকে যারা খুন করেছে তাদের যেন কড়া শাস্তি দেয় প্রশাসন। মৃত যুবকের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দর্জির কাজ করত সে। তবে সেখান থেকে বাইক চুরির চক্রের সঙ্গে কীভাবে সে যুক্ত হলে তা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না।

Spread the love