হল না বাড়ি ফেরা, ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে খুন হলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিক

সংবাদ সারাদিন, মালদা: ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে খুন হতে হল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক। করোনার জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু এলাকায় তেমন কাজ মিলছিল না। তাই করোনা আবহেই ঝুঁকি নিয়ে ফের পাঁচমাস আগে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছিলেন। খুব শীঘ্রই গুজরাট থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের কনকনিয়া এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকের। সেখানেই খুন হতে হল ওই শ্রমিককে। রবিবার বাড়ি ফিরল তার কফিনবন্দি দেহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শ্রমিকের নাম ফুদন মণ্ডল(৫২)। রবিবার গুজরাট থেকে ওই শ্রমিকের দেহ এলাকায় পৌঁছতেই পরিবারের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। গুজরাতে টাওয়ার তৈরির কাজ করতেন ফুদন। করোনাকালে তো বটেই আগেও ভিন্ রাজ্যে একাধিক শ্রমিকের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। খুনও হতে হয়েছে কয়েকজনকে। আবারও এক শ্রমিক খুন হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এলাকায় কাজ নেই বলেই ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকদের পাড়ি দিতে হচ্ছে বলে বিজেপির অভিযোগ। যদিও বিজেপি শাসিত গুজরাটে এ রাজ্যের শ্রমিক খুন হওয়ার বিষয়টিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন। শুরু হয়েছে তৃণমূল বিজেপির চাপানউতোর।

মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সাদলিচক পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ বছর ধরে ভিন্ রাজ্যে কাজ করেই সংসার চালাতেন ফুদন। কনকনিয়া এলাকায় বাড়ি বলতে ভাঙাচোরা মাটির বাড়ির উপরে টালির ছাদ। তার দুই ছেলে জ্যোতিশ ও দীপেন্দ্রও পরিযায়ী শ্রমিক। তারা উত্তরপ্রদেশে থাকেন। বাবার মৃত্যুর কথা জানতে পেরেই বাড়ি ফিরেছেন। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী আশা মণ্ডল।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, গুজরাতের জামনগরে থাকতেন ফুদন। গত শুক্রবার টাওয়ারের কাজ করছিলেন ফুদন। সেখানেই মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে একজন। পুরনো কোনও শত্রুতার জেরেই তাকে খুন করা হয় বলে সন্দেহ। আহত অবস্থায় ফুদনকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। সেখানেই পরে মারা যায় তিনি। অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলেও বাড়ির লোকজন জানতে পেরেছেন।

মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী আশা দেবী মণ্ডল বলেন, ” সঠিকভাবে আমরা জানি না ঘটনাটা কি হয়েছিল। তবে সেখানে কয়েক জনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। রড দিয়ে মেরে খুন করা হয়েছে। আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে। রেশন ছাড়া কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় না। এখন কিভাবে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছিনা।”

মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের শ্যালক ভোলানাথ মণ্ডল বলেন, ” এখানে কোন কাজ নেই। তাই গুজরাটে যেতে হয়েছিল কাজ করতে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে কাজ করত। গত লকডাউনে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে ছিল। তিন চার মাস আগে আবার কাজে ফিরে যায়। যতদূর জানা যাচ্ছে সেখানেই লেবারদের মধ্যে গন্ডগোল হয়। আক্রোশ বসত রড দিয়ে মেরে খুন করা হয়।”

ভিন্ রাজ্যে একের পর এক শ্রমিকের মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়েছে তরজা। কটাক্ষের সুর চড়িয়ে বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া বলেন, শুধু ফুদনই নন। এখানে কাজ মিলছে না বলেই এলাকার শ্রমিকদের বাইরে যেতে হচ্ছে। এভাবে ওদের কার্যত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

যদিও পাল্টা শাসকদলের বিধায়ক তজমুল হোসেন বলেন, ওটা বিজেপি শাসিত রাজ্য। বিজেপির উস্কানিতেই ফুদনকে ওখানে খুন করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, এ রাজ্যেও তো গুজরাতের শ্রমিক রয়েছে। তারাও এখানে পরিযায়ী। ফলে এখানে কাজ না মেলায় বাইরে যাওয়ার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

Spread the love