দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য রুখতে হরিশ্চন্দ্রপুরে উদ্বোধন সিসিটিভি ক্যামেরার

সংবাদ সারাদিন, মালদা: দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য রুখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ী সমিতি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে। সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন হল বৃহস্পতিবার। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হল সিসিটিভি ক্যামেরার। অবশেষে দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষার পর মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর সদরে ব্যবসায়ী সমিতি ও হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হল।

এদিন হরিশ্চন্দ্রপুর শহিদ মোড়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিসিটিভি ক্যামেরা উদ্বোধন করেন মালদা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত কুমার শাও এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাঘব ভি। উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানা আইসি সঞ্জয় কুমার দাস, হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ অমল কৃষ্ণ মণ্ডল, হরিশ্চন্দ্রপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পবন কেডিয়া, সভাপতি ডাবলু রজক, কোষাধক্ষ্য প্রবীণ কেডিয়া, অঙ্কিত চৌধুরী সহ আরও অনেকে। এদিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত কুমার শাও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার উদ্বোধন করেন। বৃহস্পতিবার থেকেই এই ক্যামেরাগুলি কাজ শুরু করে দেবে।

প্রসঙ্গত, অবস্থানটাই সুবিধেজনক। তাই নিজেদের অপারেশনে বারবার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরকে বেছে নিয়েছে সমাজ-বিরোধীরা। দুষ্কর্ম করে একবার বিহারে ঢুকে পড়তে পারলেই হল। তাহলে এ’রাজ্যের পুলিশ আর তাদের নাগাল পাবে না। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে দুষ্কৃতীদের সফ্‌ট টার্গেট হরিশ্চন্দ্রপুর। এখানে যেমন অনেক বনেদি পরিবার রয়েছে, তেমনই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসাবে হরিশ্চন্দ্রপুরের নাম রয়েছে মালদা থেকে শুরু করে প্রতিবেশী রাজ্যেও। তাই মাঝে মধ্যেই চুরি, ছিনতাই, এমনকি গোলাগুলি চলার খবরও উঠে আসছে এই এলাকা থেকে। করোনা আবহে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। দুষ্কৃতীদের রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা পুলিশ। যান্ত্রিক নজরদারিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রধান এলাকা। এক্ষেত্রে পুলিশের তরফে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতিরও সহায়তা নেওয়া হয়েছে। মালদা জেলার পশ্চিম প্রান্তে হরিশ্চন্দ্রপুরের অবস্থান। পাশেই বিহার। এখান থেকে প্রতিবেশী রাজ্যে যাওয়ার একাধিক পথ রয়েছে। দীর্ঘদিন আগে থেকেই হরিশ্চন্দ্রপুর এই জেলার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। জমিদার প্রথা বিলোপের পরেও তার গায়ে লেগে থাকা সেই সুনাম অক্ষুন্ন। তাই অনেক আগেই হরিশ্চন্দ্রপুরে ব্যবসার পত্তন করেছিলেন একাধিক ব্যবসায়ী। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একাধিক ব্যাংক ও অর্থ আদান প্রদানকারী সংস্থার দফতর। এভাবেই ধীরে ধীরে ব্যবসার প্রসার বাড়তে থাকে। বর্তমানে হরিশ্চন্দ্রপুর শুধু জেলা বা রাজ্য নয়, দেশেও অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। সে কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার সোনালি চতুর্ভূজ সড়ক যোজনায় হরিশ্চন্দ্রপুরের কথা মাথায় রেখেছে বলেই মনে করেন জেলাবাসীর একাংশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত কুমার শাও বলেন,” আজ হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার উদ্বোধনে এসেছিলাম। আপাতত মোট ১৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা ইন্সটল হয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতি এবং পুলিশের উদ্যোগে এগুলি লাগানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এবার থেকে এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হবে। দুষ্কৃতীদের রোখা যাবে।”

হরিশ্চন্দ্রপুর ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ প্রবীণ কেডিয়া বলেন, “আজ হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। আমাদের ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের সহায়তায় সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি লাগানো হয়েছে। বিহার সীমান্তবর্তী হওয়াই এখানে অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়েই চলেছিল। সিসিটিভি ক্যামেরা তৃতীয় চোখের কাজ করবে। যে উদ্দেশ্যে লাগানো হয়েছে আশা করা যাচ্ছে তা সফল হবে।”

দিনের পর দিন এই এলাকায় বেড়ে চলেছিল অপরাধমূলক কাজকর্ম। দুষ্কৃতীরা সহজেই পালিয়ে যেত বিহারে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিল সাধারণ মানুষেরা। সেই জন্যই কিছুদিন আগে বৈঠকের মাধ্যমে এই উদ্যোগ নিয়েছিল ব্যবসায়ী সমিতি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ। তারই বাস্তবায়ন হল বৃহস্পতিবার। স্বভাবতই খুশি হরিশ্চন্দ্রপুরের সাধারণ মানুষেরা।

Spread the love