অবশেষে ২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে হরিশ্চন্দ্রপুরে গ্রেফতার ১

সংবাদ সারাদিন, মালদা: অবশেষে ২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার একজন। গ্রেফতার ব্যক্তির নাম শেখ সামাদ। তার বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোবারকপুর এলাকার। তিনি শাসক দলের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এলাকায়। তাছাড়া তিনি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন শাসক দলের সদস্য ছিলেন। এলাকায় তিনি একটি সিএসপি চালাতেন বলে সূত্রের খবর। এই সিএসপির মাধ্যমে তিনি প্রচুর ভুয়া একাউন্টে বন্যা ত্রাণের টাকা টান্সফার করেছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বেশ কিছু মৃত ব্যক্তির একাউন্টেও তিনি টাকা লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বুধবার চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজত প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লক এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। সেই সময় প্রচুর বাড়িঘর এলাকায় ভেঙে যায় বন্যার জলের দাপটে। স্থানীয় পঞ্চায়েত স্তর থেকে এরপরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয়। সেই তালিকা ধরে এলাকার প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকার থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই ত্রাণের টাকা নিয়ে চলে ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি। অভিযোগ সেই সময় প্রচুর ভুয়ো একাউন্টে ত্রাণের টাকা টান্সফার করা হয়। এমনকি একই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ত্রাণের টাকাও তোলা হয়। ব্যবহার করা হয় মৃতব্যক্তির একাউন্ট। অভিযোগ ওঠে এলাকার শাসক দলের নেতারা এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে মদত যুগিয়েছে। এমনকি এই দুর্নীতির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে এলাকার প্রচুর সিএসপিকে। এই নিয়ে বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় সরকারি ত্রানের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই বরুই অঞ্চলের প্রধান সোনা মনি সাহাকে এখনও হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বলে খবর। পুলিশ সূত্রে খবর তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস। যদিও বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের অনেক রাঘববোয়াল যুক্ত আছে বলে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। পাল্টা অন্যায় চুরি এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন তারা দল ছেড়ে চলে যেতে পারেন কড়া বার্তা দিলেন জেলা তৃণমূল।

এদিকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শেখ সামাদকে কোর্টে পেশ করার সময় এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। মৃত ব্যক্তির একাউন্টে যে টাকা ঢোকানো হয়েছিল তা ওই ব্যক্তিদের ছেলেকে দেওয়া হয়েছে। তবে কিভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে তিনি টাকা প্রদান করলেন সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেন নি শেখ সামাদ।

জেলা শহর সভাপতি তথা তৃণমূল জেলা কমিটির সদস্য নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, তৃণমূল যারা করবে তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে না। এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কেউ চুরি করে ধরা পড়লে তৃণমূল করলেই যে সে বেঁচে যাবে তা না। অন্যায় চুরি বরদাস্ত করে না তৃণমূল। যদি চুরি করেই থাকে তাহলে শাস্তির দাবি আমরাও করব। যারা অন্যায় চুরি এগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকবেন তারা দল ছেড়ে চলে যেতে পারেন কড়া বার্তা দিলেন জেলা তৃণমূল। এ বিষয়ে সরব হয়েছেন এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের দাবি বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের অনেক রাঘববোয়াল যুক্ত আছে আগে তাদেরকে ধরা হোক।

এ প্রসঙ্গে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রুপেস আগারওয়াল জানান, ২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে প্রচুর টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তারা টাকায় পাইনি। হরিশ্চন্দ্রপুর থানা দুটি ব্লকে প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই নিয়ে ভূরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির নামে টাকা ঢুকানো হয়েছে। আমরা চাই সঠিক তদন্ত করে সমস্ত দোষীদেরকে গ্রেফতার করা হোক।

Spread the love