হাওড়ায় শীতলা মায়ের পুজোয় প্রসাদ বিতরণ চলাকালীন দুষ্কৃতীর তাণ্ডব, চলল গুলি ও বোমা

সংবাদ সারাদিন, হাওড়া: শীতলা মায়ের পুজোয় দুষ্কৃতী তান্ডব ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল হাওড়ার লিলুয়ায়। চলল গুলি ও বোমা। হাওড়ার লিলুয়ার চকপাড়া এলাকায় বুধবার রাতে শীতলা মায়ের প্রসাদ ভোগ বিতরণের অনুষ্ঠান চলাকালীন এলাকার কিছু দুষ্কৃতী এসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এর আগে বুধবার সকালেও ঝামেলা হয়। শীতলা পুজো দিতে আসা এক মহিলাকে কটূক্তি এবং গালিগালাজ করা নিয়ে এলাকার মানুষ তাদের বাধা দিলে তখনকার মতো তারা চলে গেলেও রাতে প্রসাদ বিতরণের সময় ফের নতুন করে অশান্তি শুরু হয়। সেখানকার মানুষ দুষ্কৃতীদের পিছনে ধাওয়া করলে মিলনী মোড়ের কাছে গিয়ে দুষ্কৃতীরা পরপর তিন রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। গুলি চালানোর পর এলাকার মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে দুষ্কৃতীরা পরপর বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে এলাকা ছেড়ে পালায়। এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় ওই এলাকায়। ঘটনার পর লিলুয়া থানার বিশাল পুলিশবাহিনী আসে। যদিও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার দুষ্কৃতীরা সেখান ঠেক বানিয়ে প্রতিদিন সমাজবিরোধী কার্যকলাপ চালায়। মদ, জুয়ার আসর বসে। বারবার প্রতিবাদ জানিয়েও ঘটনার কোনও সুরাহা হয়নি। ঘটনায় প্রকাশ, বুধবার দুষ্কৃতীরা এসে শীতলা মায়ের পুজো চলাকালীন সেখানে এসে গালিগালাজ করে মহিলাদের ইভটিজিং করে। এই নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে রাতে ফের গন্ডগোল হয়। এখনও এলাকার পরিবেশ থমথমে রয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী এক মহিলা বলেন, এখানে আমাদের শীতলা মায়ের স্নানযাত্রা উপলক্ষে পুজো চলছিল। এটা বহু বছর ধরেই হয়। মঙ্গলবার রাতে এলাকার কিছু ছেলে সেখানে ঝামেলা করেছে। পাড়ার বড়রা মিলে তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরপর বুধবার সকালে আমি যখন পুজো দিতে আসি তখন আমি পাড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। তখনই লালু, কাকে সহ কয়েকজন আমাকে দেখতে পেয়ে নোংরা ভাষায় কিছু মন্তব্য করে। তখন এখানকার কিছু ছেলে এই ঘটনার প্রতিবাদ করে। এরপর ওরা চলে যায়। এরপর যখন রাতে যখন প্রসাদ খাচ্ছিলাম তখন ওরা আবার বাইক নিয়ে আসে। এসে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এরপর আমরা মহিলারা প্রতিবাদ জানালে ওরা তখন আগ্নেয়াস্ত্র বার করে আমার স্বামীকে গুলি করার চেষ্টা করে। এরপর এলাকার মানুষ যখন জড়ো হয়ে যায় তখন ওরা পরপর চারটি বোমা ছোঁড়ে। এরা কোনও দলের নয়। এরা সমাজবিরোধী।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আশিস দাস বলেন, আমাদের এখানে শীতলা মায়ের পুজো হচ্ছিল। সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছিল। আমি এখানে বসেছিলাম। ওরা তখন গাড়ি নিয়ে এলো। গাড়িতে মোট তিনজন ছিল। এসেই অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে শুরু করলো। তখন এখানের উপস্থিত জনতা ওদের ধরার জন্য তাড়া করলো। আমিও গিয়েছিলাম। এরপর আমরা যখন মিলনী মোড়ে যাই তখন ওরা আমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে বলল, আমাদের তাড়া করেছিস। বলেই ওরা গুলি চালিয়েছিল। আমি কোনওরকমে মাথা নিচু করে নিজেকে বাঁচিয়ে নিই। উপরে ফায়ারিং হয়ে যায়। এরপর ওরা তিনজন মিলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। আমি দৌড়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে ঢুকে পড়ি। সৌমেন, লালু, কাকে এই তিনজন সমাজবিরোধী এসেছিল এখানে। এখানে সমাজবিরোধীদের ঠেক চলে। মদের আসর বসে। আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। বুধবার সকালে এরা যখন জুনিয়ার ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা করছিল তখন প্রতিবাদ করাতে এরা রাতে এসে আমার উপর আক্রমণ চালায়।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, এখানে সমাজবিরোধীদের আড্ডা চলে। এরা নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে। আজকে যখন এখানে মা শীতলার পূজা হচ্ছে, সেখানে পাড়ার মেয়েরা উপস্থিতি রয়েছেন। তখন এরা অশ্লীল ভাষায় মন্তব্য করে। তখন আমরা প্রতিবাদ করায় ওরা চলে যায়। এরপর রাতে যখন সেখানে মা শীতলার খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হচ্ছিল তখন ওরা ফের আসে। এরপর এখানে এসে তারা আমাদের নাম করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। হুমকি দেয় এদের গুলি করে মারব। এরপর এখানকার লোকজন ওদের তারা করলে মিলনী মোড়ে গিয়ে ওরা গুলি চালায়, বোমা ছোড়ে। আমরা কোনওরকমে জীবন বাঁচিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।

Spread the love