জঙ্গী সন্দেহে এসটিএফ গ্রেফতার করল গঙ্গারামপুরের যুবককে, মানতে নারাজ পরিবার

সংবাদ সারাদিন, গঙ্গারামপুর: গতকাল বারাসাতে জঙ্গী কার্যকালাপে যুক্ত সন্দেহে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর থানার আউসা গ্রামের আব্দুর রাকিব সরকারকে গ্রেফতার করেছে এসটিএফ। বৃহস্পতিবার সকালে পরিবার পরিজন জানতে পারেন রাকিব জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে। এদিকে ছেলে গ্রেফতার হয়েছে জঙ্গী সন্দেহে তা কোন ভাবেই মানতে পারছেন না তার বৃদ্ধ বাবা মা। শান্ত ও মেধাবী ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল রাকিব। প্রথমে গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পরে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত স্থানীয় ফুলবাড়ি হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন সে৷ তারপর থেকেই মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করছে। তারপর জয়দেবপুর মাদ্রাসায় পড়াশুনা করত৷ সেখান থেকে উত্তর প্রদেশে পড়াশুনা করে৷ পরবর্তীতে কলকাতার একাধিক জায়গায় মাদ্রাসা চালাত সে৷ বাড়িতে বাবা মা ও দুই ভাই এবং স্ত্রী ও নিজের তিন সন্তান রয়েছে৷ গত ২ আগস্ট স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান প্রসবের পর কলকাতায় চলে যায়৷ বাবা রফিউদ্দিন সরকার। পেশায় কৃষক। রফিউদ্দিনবাবুর বড় ছেলে রাকিব৷ বাকি দুই ছেলেও পড়াশুনায় ভাল। গত ২৯ জুলাই স্ত্রী সন্তান প্রসব হয়। সেই সময় বাড়িতেই ছিল রাকিব৷ এদিকে রাকিব এর আগে আসাম, কোচবিহারে সহ একাধিক জায়গায় থাকত বলে জানা গেছে৷

করোনা আবহাওয়ায় লকডাউনের সময় বাড়িতেই ছিল রাকিব। এদিকে বাড়িতে আসলেও তার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেনি তার বাবা-মা থেকে পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা৷ প্রায় প্রত্যেক মাসেই বাড়িতে আসত। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে কলকাতা নিয়ে থাকতো রাকিব। এদিকে শান্ত ছেলে ও পরোপকারী ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিল রাকিব। তাই ছেলে জঙ্গী কার্যকলাপে যুক্ত তা মেনে নিতে পারছেন না পরিবার ও প্রতিবেশীরা৷ তাদের অনুমান তাদের ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে চক্রান্ত করে।

এবিষয়ে মা আলিমন বিবি বলেন, আমরা শুনলাম ছেলেকে জঙ্গি হিসেবে ধরা হয়েছে।আমার ছেলে নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এলাকায় যে কেউ এসে ছেলের সম্বন্ধে খোঁজখবর নিলে কোন ক্রটি পাবে না। এলাকায় সবাই ভালো বলবেন। ও বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করায়। এর আগে কোচবিহারে চার বছর ধরে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করিয়েছে। এখন কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করাত। লকডাউনে সময় বাড়িতে ছিল। তারপর বউমা গর্ভবতী অবস্থায় ছিল কিছু দিন আগে সন্তানে জন্ম দেন তখনই বাড়িতে ছিল। এই মাসে এক দুই তারিখে চলে যায়। এরপর হঠাৎ শুনেছি তাকে গ্রেফতার করা হল। আমি চাই আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে। ও নির্দোষ।

বাবা রফিউদ্দিন সরকার বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। ছোট থেকেই শান্ত প্রকৃতির ছিল সে। পড়াশুনায়ও ভাল ছিল৷ সে কি না জঙ্গী কার্যকলাপে সঙ্গে জড়িত। তা মেনে নেওয়া যায় না।

এলাকাবাসী হাসিনা বিবি, সইমার বিবি, ধলু বিবি বলেন, আপদে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াত আব্দুল রকিব সরকার। পাশাপাশি ও এলাকায় বাড়ি পাশে মসজিদ তৈরি করেন। মসজিদের দেখা শুনার থেকে শুরু করে সমস্ত খরচ বহনের দায়িত্ব ছিল তার। খুব ভালো ছেলে। ও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করাত। ওকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।

অন্যদিকে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা মানুস সরকার বলেন, ওই ছেলেটিকে ছোট থেকেই চিনতেন তিনি। ছোট থেকেই সে বাইরে থাকত৷ ওই ছেলে এরকম কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত তা ভাবতে পারছেন না। তবে গোয়েন্দা সংস্থা গ্রেপ্তার করেছে নিশ্চয়ই কিছু ব্যাপার রয়েছে। পুরো ঘটনা খুঁজে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

Spread the love