৭ দফা দাবিতে হরিশ্চন্দ্রপুর কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে ডেপুটেশন প্রদান সিপিআইএমের

সংবাদ সারাদিন, মালদা: সাত দফা দাবিতে সিপিআইএমের ডেপুটেশন প্রদান কর্মসূচি। আবাস যোজনায় দুর্নীতি, পিএইচই’র চাকরিতে দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণ, বন্যা ত্রাণ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি সহ একাধিক দাবি নিয়ে সোচ্চার বাম নেতৃত্ব। তীব্র আক্রমণ তৃণমূলকে। অন্য সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও বন্যাত্রাণ দুর্নীতির কথা কার্যত মেনে নিল তৃণমূলও। ডেপুটেশনকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৎপর পুলিশ। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।

মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে সাত দফা দাবিতে ডেপুটেশন প্রদান করে সিপিআইএম। ডেপুটেশন কর্মসূচি হিসেবে উপস্থিত ছিল স্থানীয় সিপিআইএম নেতৃত্ব এবং কর্মীরা। আগে থেকেই পঞ্চায়েত চত্বরে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বঞ্চিতদের ঘর প্রদান, জনসমক্ষে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পিএইচের স্কিল ট্রেনিং এর জন্য নাম নির্বাচন, দ্রুত ১০০ দিনের কাজ শুরু সহ বেশ কয়েক দফা দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ডেপুটেশন কর্মসূচি শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করে সিপিআইএম। বামেদের দাবি লাগাম ছাড়া দুর্নীতি হয়েছে আবাস যোজনায়। কাটমানির বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। যার ফলে অনেক প্রকৃত উপভোক্তা বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও পিএইচ এর চাকরির স্কিল ট্রেনিং এর জন্য ব্লক প্রশাসনের নির্দেশে পঞ্চায়েত থেকে ১৭ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানেও শাসকদল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণ করছে বলে অভিযোগ বামেদের।

বামেদের দাবি তালিকায় তৃণমূল নেতা এবং তাদের আত্মীয়দের নাম রয়েছে। ২০১৭ সালের বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতি নিয়েও তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে সিপিআইএম। বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্যা তথা ব্লক মহিলা তৃণমূলে সভানেত্রী জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী তৃণমূল নেতা বাপি পাল এখনো অধরা। পুলিশের দাবি অনুযায়ী তারা পলাতক। এদিকে কিছু দিন আগেই রেশন ডিলারশিপ পেয়েছে বাপি পাল। সিপিআইএমের প্রশ্ন অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে রেশন ডিলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। কুশিদায় যে এলাকায় বন্যার জল আসেনি সেই এলাকায় ত্রানের টাকা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভিন রাজ্যে ভুয়ো একাউন্টেও ত্রানের টাকা গেছে। তারপরও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না প্রশ্ন তুলেছে বামেরা। যদিও তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী দাবি করেছেন দুর্নীতির সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিন্তু বন্যা ত্রাণ নিয়ে জয়শ্রী কর্মকার এবং বাপি পাল যে দুর্নীতি করেছেন তা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। তার দাবি পুলিশ কেন তাদের গ্রেপ্তার করছে না সেটা পুলিশ বলতে পারবে। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানোতোর।

কুশিদা অঞ্চল সিপিআইএম পার্টির কনভেনার মেরাজুল ফিরদৌস বলেন, আবাস যোজনায় ঘুষ নিয়ে ঘর দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। পিএইচির চাকরির জন্য তৃণমূল নেতাদের নাম পাঠানো হচ্ছে। এদিকে বন্যাত্রাণ দুর্নীতিতে যারা যুক্ত তারা রেশন ডিলারশিপ পাচ্ছে। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা নয়ছয় হয়েছে। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বামেরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে।

কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আখতারী খাতুনের স্বামী আব্দুর রশিদ বলেন, বিরোধীরা দুর্নীতির যে সমস্ত অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন। পিএইচইর ট্রেনিংয়ের জন্য প্রশাসনের নির্দেশে নাম পাঠানো হয়েছে। ঘর সকলে পেয়েছে। বন্যা ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি করেছিল জয়শ্রী কর্মকার এবং বাপি পাল এটা ঠিক। তবে তাদের কেনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না সেটা আমরা বলতে পারবো না।

Spread the love