দিল্লী যাওয়ার জন্য টাকা দেয়নি মা, অভিমানে তপনে আত্মঘাতী ছেলে

সংবাদ সারাদিন, তপন: দিল্লী যাওয়ার জন্য টাকা দেয়নি মা। সেলাই করে কোন রকম দিন গুজরান। রাতের বেলা হঠাৎ করে ৩ হাজার টাকা চাওয়ায় তা দিতে পারেননি মা। সেই অভিমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হল ছেলে। রবিবার বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল ছেলের ঝুলন্ত দেহ। মৃত যুবকের নাম অলিক চৌধুরী(২২)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার স্কুল মোড়ে। এদিন বিষয়টি নজরে আসতে চাঞ্চল্য ছড়ায় ছাড়া এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় তপন থানার পুলিশ। পরে পুলিশে দেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছে তপন থানার পুলিশ।

জানা গেছে, অলিকের বাবা নেই। মা সেলাই করে কোন রকমে দিন গুজরান। ছেলে অলিক লোকের দোকানে কাজ করত৷ তবে বেশ কিছু দিন ধরে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে সে। বহুবার বুঝিয়ে কোন লাভ হয়নি৷ গতকাল রাতে হঠাৎ করে অলিক তার মাকে ৩০০০ টাকা দিতে বলে। কেন টাকা চাইছে জিজ্ঞেস করলে অলিক বলে সে দিল্লি যাবে। তার জন্যই ৩০০০ টাকা লাগবে। কোন রকমে সংসার চলে। সেখানে রাত্রের বেলা হঠাৎ করে তিন হাজার টাকা কোথা থেকে আসবে? টাকার জোগাড় করতে না পেরে ছেলেকে বলে রবিবার অর্থাৎ আজ সকালে তাকে টাকা দেবে। কিন্তু জেদি ছেলের রাতেই টাকা লাগবে মাকে সাফ জানিয়ে দেয়। এদিকে এই টাকা নিয়ে মায়ের সাথে কথা-কাটাকাটিও হয়৷ এরপর তার নিজের ঘরে ঘুমোতে চলে যায়। এদিকে অরিকও তার নিজের ঘরে শুয়ে পড়ে। মায়ে ভেবেছিলে ছিলেন হয়তো ঠিকঠাক হয়ে গেছে। সকাল হলে পরে ছেলের রাগ অভিমান সব কমবে যাবে। কিন্তু বিধান ছিল অন্য কিছু। এদিন সকাল হলেও ছেলের দরজা না খোলায় চিন্তায় পড়ে যায় মা৷ অনেক ডাকাডাকির পরও কোন রকম ভাবে ছেলের সাড়া পাননি। এরপর জানালা দিয়ে তাকাতেই ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মায়ের৷ পরে দরজা ভেঙে অলিকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷

এবিষয়ে প্রতিবেশী সাজাহান আলি বলেন, গতকাল রাতে অলিক হঠাৎই তার মায়ের কাছে ৩ হাজার টাকা চায়। সেই টাকায় সে দিল্লি যাবে৷ সেখানে গিয়ে কাজ করবে। মা গরীব মানুষ। কোথা থেকে অত টাকা দেবে ছেলেকে৷ তাই বলেছিল সকালে দেবে। কিন্তু ওর রাতেই টাকা লাগবে বলে জানায়৷ টাকা দিতে না পারার জন্য মা ছেলের মধ্যে বচসা হয়৷ সেই সময় রাতে ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় ছেলে৷

এবিষয়ে মৃতের দাদা প্রসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, তার ভাই ছোট থেকেই খুব জেদী। তার মাসি ভাইকে ৩০০০ টাকা দিতে পারেনি। সেজন্যই কথা কাটাকাটি হয় রাতে। আর সে কারণে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় ভাই।

অন্যদিকে এবিষয়ে তপন থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খবর পেয়ে দেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কি কারনে ওই যুবক আত্মঘাতী হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Spread the love