সংবাদ সারাদিন, মালদা: একই পরিবারের দুই সন্তান নিখোঁজ। একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং অপরজন ষষ্ঠ শ্রেণীর। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি ঘরে। কেটে গেছে এক রাত। পুলিশের দ্বারস্থ পরিবার। অপহরণের আশঙ্কা করছেন পরিবারের লোকেরা। ক্রমশ দানা বাঁধছে রহস্য। সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য এলাকায়। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে জানা গেছে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রের পরিবার সক্রিয় ভাবে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। ফলে ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। তৃণমূলের সৌজন্যেই এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে অভিযোগ বিরোধীদের। পাল্টা তৃণমূল। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার তালসুর গ্রামের ঘটনা। ওই গ্রামের বাসিন্দা কালু পাশমান পেশায় ব্যবসায়ী। তার ছেলে কুনাল পাসমান এবং ভাইয়ের ছেলে রাজবির পাসমান গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকেই দুইজনে আর বাড়িতে ফেরেনি। কুনাল স্থানীয় মিতনা হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং রাজবীর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কুনালের পরণে ছিল নীল রঙের জামা এবং জিন্সের প্যান্ট। রাজবিরের পরনে ছিল আকাশী রঙের জামা এবং জিন্সের প্যান্ট। কালু পাশমান দোকান থেকে এসে জানতে পারে তারা দুইজন এখনও বাড়ি ফেরেনি। তারপর রাতেই খোঁজাখুঁজি শুরু করে বাড়ির লোক। তন্ন তন্ন করে খোজা হয় সমগ্র এলাকা। খোঁজ নেওয়া হয় আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। কিন্তু কোনো খোঁজ মেলেনি দুই ভাইয়ের। পরিবারের লোকেরা আশঙ্কা করে তাদের সন্তানদের অপহরণ করা হয়েছে। তারপরেই শনিবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। সন্তানদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় কান্নায় ব্যাকুল মায়েরা। দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে পরিবারের সকলের। তাদের একটাই আর্জি তারা যাতে সন্তানদের ফিরে পায়। যদিও অপহরণ করা হলে কে বা কারা করল? কেনই বা করলো? তা নিয়ে ধন্দে পরিবারের লোকেরা। কালু পাশমান এবং তার পরিবার তৃণমূল করে। ফলে সমগ্র ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে রাজনীতি। তৃণমূলের আশঙ্কা তাদের কর্মীদের সন্ত্রস্ত করার জন্য এটা বিরোধীদের চক্রান্ত হতে পারে। সাথে তাদের দাবি পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে শীঘ্রই এর কিনারা করবে। যদিও পাল্টা বিজেপির দাবি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে এই ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় নেই আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এই এলাকায়। পাশেই বিহার।হতেই পারে কোন শিশু পাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে। সমগ্র ঘটনা জানাজানি হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা গ্রামে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন অভিভাবকরা।

মতি পাশমান বলেন, আমার দোকান থেকেই আমার ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। পরে বাড়ি যে শুনছি ও বাড়িতে নেই। আমার বৌদি বলছে তার ছেলেকেও পাচ্ছে না। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি কোথাও পায়নি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করি। তবে সেই কারণে কিছু ঘটেছে কিনা সেটা বলতে পারছি না।
আত্মীয় পতিরাম পাশমান বলেন, পরিবারের লোকেরা দুশ্চিন্তা করছে। আমাদের মনে হচ্ছে কেউ অপহরণ করেছে। তাই আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি। পুলিশ খুঁজে দিক।
তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, প্রথমে এটাই চাইবো যাতে দুইজন সুস্থ ভাবে ফিরে যায়। পুলিশকে বলবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ঘটনার কিনারা করুক। তবে ওই পরিবার তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তাই এই ঘটনার পেছনে বিরোধীদের যোগের কথা একদম উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জেলা বিজেপি সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগারওয়াল বলেন, বিজেপি এই ধরনের ঘটনায় রাজনীতি করা পছন্দ করে না। তবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদদের জেরে অনেক কিছুই ঘটে।আইনশৃঙ্খলা বলে এখানে কিছু নেই। মানুষের সামান্য নিরাপত্তা নেই। তৃণমূল সব দিক দিয়ে ব্যর্থ এই ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে। হতেই পারে কোন শিশু পাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে এলাকায়।
বাড়ি থেকে কোথায় বেরিয়ে গেল দুই ভাই?বেরিয়ে তারা আর ফিরলো না কেন?ব্যক্তিগত শত্রুতা নাকি রাজনৈতিক? না এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন কারণ?একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। তদন্তের পরেই একমাত্র সামনে আসবে প্রকৃত ঘটনা।